Readme2Know । (কিছু সত্য জানতে- কিছু সত্য জানাতে) । The Pure Guidelines । Get us on FreeBasic.Com

আল্লাহর নামে মিথ্যা প্রচারের ভয়াবহ পরিণতি: আল্লাহর জবাব

আসসালামু আলাইকুম।

পবিত্র কুরআনে এমন বহু আয়াত আছে যেগুলো আমাদের অন্তর কাঁপিয়ে দেয়, চিন্তা ও আত্মসমালোচনার দিকে আহ্বান জানায়। এসব আয়াতের মাঝে একটি আয়াত রয়েছে যা বারবার ফিরে আসে--


"ومن أظلم ممن افترى على الله كذبا"

অর্থাৎ, “আর কে হতে পারে তার চেয়ে বড় জালিম, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে?”

এই বাক্যটি কুরআনের অনেক স্থানে ব্যবহৃত হয়েছে, যা এক গভীর সতর্কবার্তা বহন করে। এই আয়াতের পুনরাবৃত্তি কেবল শব্দের নয়, বরং তা একটি ভয়াবহ অন্যায়ের বিরুদ্ধে আল্লাহর পক্ষ থেকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া।

এই পোস্টে আমরা জানবো, এই আয়াতগুলো পবিত্র আল কুরআনে কোন কোন সূরায় আছে?

জালেমকে আল্লাহ কখনোই ছাড় দেন না। এটা সবাই জানে, কিন্তু জালেম কাকে বলে এটা কি সবাই জানে?

“যুলুম” (ظلم) শব্দের বাংলা অর্থ ও তাৎপর্য অনেক রকম হতে পারে, প্রসঙ্গভেদে। নিচে কিছু সাধারণ অর্থ দেওয়া হলো:

1. অন্যায়

2. নিপীড়ন

3. অবিচার

4. জুলুম

5. অধিকার হরণ

6. অত্যাচার

7. নির্যাতন

8. দুর্ব্যবহার

9. অপ্রস্তুত বা বেঠিক কাজ

10. আলোর অনুপস্থিতি (রূপক অর্থে অন্ধকার)

কুরআন বা ইসলামি পরিভাষায় “যুলুম” মূলত বোঝায় — কাউকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা বা আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন করা।

যুলুম নিজের উপরেও হয়, সেইটা আজকের আলোচনার বিষয় না। বান্দাহর উপর যুলুম করলেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া-তায়ালা কত কঠোর, সেখানে যারা আল্লাহর সাথে এই যুলুম করেন তখন কি হবে!!😢 দেখুন সোশাল মিডিয়ায় এরকম কথা অনেকেরই চোখে পড়বে হয়তো


এবিষয়ে পবিত্র কুরআনুল কারীমে অনেকবার আছে। আয়াতগুলোতে মূল মর্ম একই:

#আল্লাহর বিষয়ে মিথ্যা রচনা করা বা তাঁর নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করা সর্বাপরি অন্যায়। যা সকল ক্ষেত্রে শিরক ও কুফর বলা হয়েছে ।

পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত মহান আল্লাহ তাআলার কথাগুলো হতে নিচে কিছু কথা উল্লেখ করা হলো:

"وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا"

— অর্থাৎ *“আর কে হতে পারে তার চেয়ে অধিক জালিম, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে”* —

১. সূরা আল-আন‘আম (৬:২১)

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِآيَاتِهِ ۚ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ

“আর কে হতে পারে তার চেয়ে অধিক জালিম, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে অথবা তাঁর আয়াতকে অস্বীকার করে? নিশ্চয়ই জালিমরা সফল হবে না।”

---

২. সূরা হুদ (১১:১৮)

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا ۚ أُولَٰئِكَ يُعْرَضُونَ عَلَىٰ رَبِّهِمْ...

“আর কে হতে পারে তার চেয়ে অধিক জালিম, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে? তারাই তাদের রবের সম্মুখে উপস্থিত হবে...”

---

৩. সূরা আস-সাজদা (৩২:২২)

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ ثُمَّ أَعْرَضَ عَنْهَا...

(এখানে একই কাঠামোতে কথা বলা হলেও একটু পরিবর্তিত)

“আর কে অধিক জালিম, যার কাছে তার রবের আয়াতসমূহ স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়, কিন্তু সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়?”

---

৪. সূরা আল-আনকাবূত (২৯:৬৮), 

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِالْحَقِّ لَمَّا جَاءَهُ ۚ أَلَيْسَ فِي جَهَنَّمَ مَثْوًى لِّلْكَافِرِينَ

"আর কে হতে পারে তার চেয়ে বড় জালিম, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে অথবা যখন তার কাছে সত্য আসে তখন তা অস্বীকার করে? জাহান্নামে কি কাফিরদের জন্য আবাস নেই?"

---

৫. সূরা আল-আ'রাফ (৭:৩৭)

فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِـَٔايَـٰتِهِۦٓ ۚ أُو۟لَـٰٓئِكَ يَنَالُهُمْ نَصِيبُهُم مِّنَ ٱلْكِتَـٰبِ ۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءَتْهُمْ رُسُلُنَا يَتَوَفَّوْنَهُمْ قَالُوٓا۟ أَيْنَ مَا كُنتُمْ تَدْعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ ۖ قَالُوا۟ ضَلُّوا۟ عَنَّا وَشَهِدُوا۟ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمْ أَنَّهُمْ كَانُوا۟ كَـٰفِرِينَ

"আর কে হতে পারে তার চেয়ে বড় জালিম, যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে বা তাঁর আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে? এদের প্রাপ্য থাকবে কিতাবে লিখিত অনুপাতে। অবশেষে যখন আমার ফেরেশতারা তাদের প্রান কেড়ে নিতে আসে, তখন তারা বলে, 'তোমরা কোথায় গিয়েছিলে, যাদেরকে আল্লাহ ব্যতীত ডাকতে?' তারা বলবে, 'তারা আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে।' আর তারা নিজেরাই স্বীকার করবে, তারা ছিল কাফির।"

---

৬. সূরা ইউনুস (১০:১৭)

فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ ٱفْتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِـَٔايَـٰتِهِۦٓ ۚ إِنَّهُۥ لَا يُفْلِحُ ٱلْمُجْرِمُونَ

"আর কে হতে পারে তার চেয়ে বড় জালিম, যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা আরোপ করে অথবা তাঁর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে? নিশ্চয়ই অপরাধীরা সফলকাম হয় না।"

---

৭. সূরা আল-আন’আম (৬:৯৩)

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ ٱفْتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا أَوْ قَالَ أُوحِىَ إِلَىَّ وَلَمْ يُوحَ إِلَيْهِ شَىْءٌۖ وَمَن قَالَ سَأُنزِلُ مِثْلَ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُۗ وَلَوْ تَرَىٰٓ إِذِ ٱلظَّـٰلِمُونَ فِى غَمَرَٰتِ ٱلْمَوْتِ وَٱلْمَلَـٰٓئِكَةُ بَاسِطُوٓا۟ أَيْدِيهِمْ أَخْرِجُوٓا۟ أَنفُسَكُمُۚ ٱلْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ ٱلْهُونِ بِمَا كُنتُمْ تَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ غَيْرَ ٱلْحَقِّ وَكُنتُمْ عَنْ ءَايَـٰتِهِۦ تَسْتَكْبِرُونَ

"আর কে হতে পারে তার চেয়ে বড় জালিম, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে অথবা বলে, ‘আমার প্রতি ওহি এসেছে’, অথচ তার প্রতি কিছুই ওহি আসেনি, এবং যে বলে, ‘আমি যা কিছু নাযিল করেছে আল্লাহ, তদ্রূপ আমি ও নাযিল করব।’ যদি তুমি দেখতে যখন জালিমরা মৃত্যুর যন্ত্রণায় থাকে এবং ফেরেশতাগণ তাদের দিকে হাত প্রসারিত করে বলে, 'তোমরা তোমাদের প্রাণসমূহ বের করে দাও, আজ তোমাদেরকে হীনতাপূর্ণ শাস্তি দেয়া হবে, যেহেতু তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা বলেছিলে এবং তাঁর আয়াতের প্রতি অহংকার করেছিলে।'"

“আল্লাহর নামে মিথ্যারোপ” কেবল একটি ধর্মীয় অন্যায় নয়, বরং এটি এমন একটি কাজ যা মানুষের আত্মা, সমাজ ও আখিরাত—সবকিছু ধ্বংস করে দিতে পারে। তাই পবিত্র কুরআন বারবার এই অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় সতর্ক করেছে।

এই আয়াতগুলো সত্যকে অস্বীকারকারী এবং আল্লাহর ওপর মিথ্যা আরোপকারীদের কঠিন পরিণতির সতর্কতা দেয়। আমরা যেন কখনোই আল্লাহর নামে ভুল কথা না বলি, নিজের মনগড়া ধর্ম তৈরি না করি, এবং কুরআনের সঠিক বাণীকে বুঝে গ্রহণ করি—এই হোক আমাদের শিক্ষা।

কোন মন্তব্য নেই

Page 1 of 31123...50
LOAD MORE POST
Blogger দ্বারা পরিচালিত.